Names

পারস্য দেশের বর্তমান নাম কি

(Parso Desher Bortoman Nam Ki) পারস্য দেশের বর্তমান নাম কি – পারস্য, যাকে আজকাল আমরা ইরান হিসেবে জানি, পৃথিবীর একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক দেশ। এই দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বৈশিষ্ট্য অনেক প্রাচীন সময় থেকে শুরু হয়ে আজকের আধুনিক ইরানে পরিণত হয়েছে।

পারস্যের পরিবর্তিত নাম এবং এর ইতিহাস নিয়ে জানার মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য, যা আমাদের অতীতকে জীবন্তভাবে অনুভব করতে সাহায্য করে।

পারস্য দেশের বর্তমান নাম কি

পারস্য দেশের বর্তমান নাম ইরান। ১৯৩৫ সালে, শাহ রেজা পাহলভি ইরানকে আধুনিক করার উদ্দেশ্যে দেশটির নাম পরিবর্তন করে “পারস্য” থেকে “ইরান” রাখেন। ইরান শব্দটির অর্থ “আর্যদের দেশ”, যা দেশটির প্রাচীন জনগণের পরিচয় এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ইরানের পূর্ব নাম কি ছিল

পারস্য দেশটির বর্তমান নাম ইরান, কিন্তু এর পূর্ব নাম ছিল “পারস্য“। এটি বহু শতক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষদের কাছে পরিচিত ছিল। পারস্য নামটি আদি পারসিক জনগণের নাম থেকে এসেছে, যারা এই অঞ্চলে বাস করত। তবে ১৯৩৫ সালে, শাহ রেজা পাহলভি ইরানকে আধুনিক করতে চেয়ে দেশটির নাম পরিবর্তন করেন এবং “পারস্য” নামের পরিবর্তে “ইরান” নামটি গ্রহণ করা হয়। ইরান শব্দটি “আর্যদের দেশ” বোঝায়, যা তাদের ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত।

পারস্য দেশটি কোথায় অবস্থিত ছিল

পারস্য বা ইরান দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত একটি বৃহৎ দেশ। এটি ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে। ইরান, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং এটি আঙোলিয়া, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুরস্ক, আজারবাইজান, কিরগিজস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের সীমান্তে অবস্থিত। পারস্য সাম্রাজ্যের সময়, এই দেশটি অনেক বিস্তৃত ছিল এবং এর প্রভাব বিস্তৃত ছিল নানা অঞ্চলে, যা আজকের তুরস্ক, ইরাক, আফগানিস্তান এবং আরও কিছু অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করত।

পারস্য দেশের প্রতিষ্ঠাতা কে

পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাইরাস দ্য গ্রেট (Cyrus the Great), যিনি প্রাচীন পারস্যে ইরান বা পারস্য সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। সাইরাসের শাসনামলে, পারস্য এক বিস্তৃত সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে ওঠে এবং নানা জাতি-গোষ্ঠীকে একত্রিত করার মাধ্যমে ইরানকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর শাসন ছিল শান্তিপূর্ণ এবং বুদ্ধিদীপ্ত, এবং তিনি মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। সাইরাসের এই শাসনই পারস্য সাম্রাজ্যকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য বানিয়েছিল।

পারস্য দেশের ইতিহাস

পারস্যের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও নানা চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। প্রথম দিকে এটি ছিল একাধিক রাজ্য এবং সাম্রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত, তবে সাইরাস দ্য গ্রেট এর প্রতিষ্ঠার পর পারস্য সাম্রাজ্য বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্য হয়ে ওঠে। পারস্য সাম্রাজ্য প্রাচীন গ্রিস, মিশর এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।

(Parso Desher Bortoman Nam Ki) পারস্য দেশের বর্তমান নাম কি
(Parso Desher Bortoman Nam Ki) পারস্য দেশের বর্তমান নাম কি

পারস্যের ইতিহাস আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তার পরবর্তী শাসকদের মাধ্যমে, বিশেষ করে দারিউস দ্য গ্রেট এবং এক্সার্কসদের (Achaemenid Empire)। পারস্য সাম্রাজ্য পৃথিবীর একাধিক প্রাচীন সংস্কৃতির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল। তবে, পরবর্তীকালে, ইসলামিক সাম্রাজ্য এবং তুর্কি, মঙ্গোল আক্রমণের পর পারস্যে অনেক পরিবর্তন আসে।

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব ঘটে, যা দেশটির রাজনীতি ও সমাজকে নতুনভাবে ঢেলে সাজায়। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি তখত থেকে অপসারিত হন এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইরানে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে ইরান একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে পরিচিত।

পারস্য দেশের বৈশিষ্ট্য

পারস্য (বর্তমানে ইরান) দেশের বৈশিষ্ট্য অনেক দিক থেকে বিশেষ এবং তা বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

  • ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: পারস্যের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং প্রাচীন। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র ছিল এবং এর সাহিত্য, শিল্পকলা, দর্শন, এবং বিজ্ঞান অনেক অগ্রগামী ছিল। ফার্সি সাহিত্য যেমন রুসমত-ই-ফারহি, সাদি, হাফিজ, রুমি ইত্যাদি কবিরা বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য রত্ন। পারস্যের প্রাচীন স্থাপত্য যেমন শাহী মসজিদ, পুরনো প্যালেস, প্রাচীন দুর্গ এবং অন্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলি আজও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে চিহ্নিত।
  • ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য: ইরান মূলত ইসলামি প্রজাতন্ত্র হলেও, এর ইতিহাসে বিভিন্ন ধর্ম এবং সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ মেলবন্ধন রয়েছে। ইরানে শিয়া ইসলাম আধিপত্য বিস্তার করে, তবে এখানে পারস্যিক ধর্মযুদ্ধ (জোরাসটারিয়ানিজম), ইহুদি, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের সম্প্রদায়ও ছিল। ইরান ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং বহু ধর্মীয় ঐতিহ্যের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত।
  • রাজনৈতিক ইতিহাস: পারস্যের ইতিহাসে প্রাচীন সাম্রাজ্য যেমন সাইরাস দ্য গ্রেটের পারস্য সাম্রাজ্য, দারিউস এবং আকাশেমেনিড সাম্রাজ্য ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। পরবর্তী সময়ে ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরান একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় এবং বর্তমানে এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে পরিচিত।
  • স্থাপত্য ও শিল্পকলা: পারস্যের স্থাপত্য বিশেষত এর মসজিদ, প্রাসাদ, এবং পারস্যিক বাগানগুলো পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলী, জ্যামিতিক নকশা এবং সজ্জাবিষয়ক শৈল্পিক কারুশিল্পে পারস্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ফার্সি কার্পেট এবং তামাকচাষের শিল্পও বিশ্বে খুব জনপ্রিয়।
  • ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য: ইরান দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত এবং এর ভূগোল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। ইরানে রয়েছে মরুভূমি, পর্বত, উপত্যকা এবং উপকূলরেখা যা দেশটির জলবায়ু এবং কৃষি উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডে অবস্থিত এবং এর আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার রয়েছে।
  • অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য: ইরানের অর্থনীতি প্রধানত তেল ও গ্যাস নির্ভর, কারণ দেশটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। তাছাড়া, ইরানে বিভিন্ন শিল্প, কৃষি এবং কারুশিল্পও উল্লেখযোগ্য। দেশটির ইতিহাসে বাণিজ্যিক কার্যকলাপ এবং অর্থনৈতিক উন্নতির অনেক গুরুত্ব রয়েছে।

সম্পর্কিত পোষ্ট: গুজরাটের রাজধানীর নাম কি

উপসংহার,

পারস্য বা ইরান একটি ঐতিহাসিক দেশ, যার ইতিহাস এবং বৈশিষ্ট্য পৃথিবীজুড়ে পরিচিত। ইরানের বর্তমান নামের সাথে তার অতীতের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে, যা তার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। ইরানের ইতিহাস জানলে আমরা দেখতে পাই, একটি ছোট রাজ্য থেকে শুরু হয়ে কিভাবে এটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল এবং আজকের আধুনিক ইরান হয়ে উঠেছে।

Related Articles

Leave a Reply