ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম ও বিধান
(Cheledder Akika Dewar Niom) ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম ও বিধান: আকিকা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত, যা সন্তান জন্মের পরে পালন করা হয়। ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রত্যেক পিতামাতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সন্তানের জন্মের পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে তারা যথাযথভাবে আকিকা পালন করতে পারেন। আজ আমি ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম
ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম হলো নবজাতক ছেলেদের জন্য একটি বিশেষ ইসলামী ইবাদত, যা সাধারণত জন্মের সপ্তম দিনে পালন করা হয়।আকিকার জন্য দুটি ছাগল বা একটি গরু জবাই করা সুন্নত, যা নবজাতক ছেলের নামে উৎসর্গ করা হয়।আকিকার গোশত পিতামাতা, আত্মীয় এবং বন্ধুরা খেতে পারে, এবং এটি সদকার অংশ হিসেবেও গণ্য হয়।
হাদিস অনুযায়ী, ছেলেদের আকিকার সময় নবজাতকের চুল কাটা এবং গোশত বিতরণ করার নিয়ম রয়েছে।সপ্তম দিনে আকিকা পালন করা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম অথবা একুশতম দিনেও এটি করা যেতে পারে।আকিকার সময় আল্লাহর কাছে সন্তানের কল্যাণের জন্য দোয়া করারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।যদি কেউ নবজাতকের পক্ষ থেকে আকিকা করতে চায়, তবে তার জন্যও আকিকার নিয়ম পালন করা উচিত।
ছেলেদের আকিকা কত দিনে দিতে হবে
আকিকার জন্য সর্বোত্তম সময় হলো নবজাতক শিশুর জন্মের সপ্তম দিন। হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাতি হাসান ও হুসাইনের জন্য সপ্তম দিনে আকিকা করেছিলেন। তবে যদি সপ্তম দিনে সম্ভব না হয়, তাহলে চৌদ্দতম দিন বা একুশতম দিন নেও আকিকা করা যেতে পারে। এই নিয়মটি আল্লাহর দয়া এবং ইসলামের সহজতরতার একটি উদাহরণ, কারণ সব সময়েই মানুষের জন্য সুবিধার কথা চিন্তা করা হয়েছে।
কুরবানীর সাথে ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম
অনেকেই জানতে চান, কুরবানির সাথে আকিকা করা সম্ভব কি না। হ্যাঁ, কুরবানির সময় ছেলেদের আকিকা করা যেতে পারে। তবে এটি একটি আলাদা ইবাদত, তাই প্রত্যেকটি ইবাদতের জন্য আলাদা আলাদা পশু জবাই করা উত্তম। তবে যারা দুই ইবাদত একত্রে পালন করতে চান, তারা একটি বড় পশু (গরু বা উট) দিয়ে আকিকা ও কুরবানি উভয়েই করতে পারেন। এক্ষেত্রে, পশুর সাত ভাগের একটি ভাগ আকিকার জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে।
ছেলেদের আকিকার নিয়ম ও দোয়া
আকিকার সময় বিশেষ কোনো দোয়া পড়া হয়, যা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং নবজাতকের জন্য দোয়া করা হয়। আকিকা করার সময় নিচের দোয়াটি পড়া উত্তম:
আকিকার দোয়া:
_”আল্লাহুম্মা হাজিহি আকিকাতু ইবনি (নাম) লাহমুহা বিলাহমিহি, ওয়া দামুহা বিদামিহি, ওয়া আজমুহা বিআযমিহি, ওয়া জিলদুহা বিজিলদিহি। আল্লাহুম্মা আজআলহা ফিদাআললি ইবনি মিনান্নার।”_
এরপর, কোরবানি দেওয়ার সময় পড়া দোয়া _“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার”_ বলে আকিকার পশু জবাই করা হয়।
গরু দিয়ে ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম
গরু দিয়ে আকিকা করার নিয়মও সহজ। একটি গরু দিয়ে সাত জনের আকিকা করা যেতে পারে, তবে একজনের আকিকার জন্য পুরো গরু জবাই করা উত্তম। গরুর বয়স, শারীরিক গঠন এবং স্বাস্থ্য কুরবানির জন্য যেমনটা নির্দিষ্ট, আকিকার ক্ষেত্রেও তাই প্রযোজ্য। কুরবানি যেমন গরুতে অংশীদারিত্বে দেওয়া যায়, ঠিক তেমন আকিকাতেও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে করা যায়।
ছাগল দিয়ে ছেলেদের আকিকার নিয়ম
ছেলের জন্য দুটি ছাগল জবাই করা সুন্নত, তবে কেউ চাইলে একটি দিয়েও আকিকা করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল জবাই করা উচিত। ছাগল অবশ্যই সুস্থ ও নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে। আকিকার সময়, কোরবানির পশুর শর্তগুলোর মতোই ছাগলটির শারীরিক শর্ত পূর্ণ হওয়া উচিত।
আকিকার গোস্ত খাওয়ার নিয়ম
আকিকার মাংস খাওয়ার নিয়মও খুবই সহজ। হাদিস অনুযায়ী, আকিকার মাংস নিজে খাওয়া, অন্যদের খাওয়ানো এবং কিছু অংশ সদকা করা মুস্তাহাব। এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট ভাগ নির্ধারণ নেই। আপনি ইচ্ছে করলে আকিকার মাংস নিজের পরিবারে রাখতে পারেন, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করতে পারেন এবং গরিবদের সদকা করতে পারেন।
পড়তে পারেন: স দিয়ে সাহাবীদের নাম অর্থসহ ছেলেদের ইসলামিক নামের তালিকা।
আশা করি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে ছেলেদার আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি স্পষ্টভাবে ধারণা পেয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে আকিকা পালন করার তৌফিক দিন, এবং সন্তানদের জন্য সর্বোত্তম কল্যাণ প্রদান করুন। আমীন।।